আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলা দ্বিতীয় পত্র সিলেবাসের চিঠি নামক একটি অংশ রয়েছে। এটি মূলত চিঠি লেখাকে বুঝায়। অর্থাৎ কোন শিক্ষার্থী যদি ভালোভাবে চিঠি লিখতে পারে তাহলে তার জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ করা থাকে।
কিন্তু কথা হল এই চিঠি কিভাবে লিখতে হবে? সঠিকভাবে নিয়ম মেনে চিঠি না লিখতে পারলে এই সম্পূর্ণ নাম্বার পাওয়া যাবে না। তাই আজকে আমি আমার আলোচনার বিষয় এটিকেই বেছে নিয়েছি। আজকে আমি জানিয়ে দেবো বন্ধুকে চিঠি লেখার নিয়ম বাংলায়।
আজকের এই সম্পূর্ণ আলোচনাটি পড়ার পর আপনি জেনে যাবেন বন্ধুকে চিঠি লেখার নিয়ম কি? কিভাবে চিঠি লিখতে হয় এবং একটি নমুনাও দেওয়া থাকবে। প্রথমে আপনাকে সরাসরি নিয়মাবলী জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর চিঠি কিভাবে লিখতে হবে সেটিও জানিয়ে দেওয়া হবে।
Read More : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুচ্ছেদ ১০০, ২০০ এবং ২৫০ শব্দে
বন্ধুকে চিঠি লেখার নিয়ম বাংলা
আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে চিঠি লেখার প্রথা অনেক পুরাতন হলেও বর্তমান এই আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে এই চিঠি লেখার প্রবণতা অনেক কমে গিয়েছে। তবে এখনো পরিবারের সদস্যের কেউ দূরে থাকলে তাঁদেরকে চিঠি লিখলে তারা খুশি হন।
কমবেশি সকলকেই চিঠি লেখার নিয়ম জেনে রাখা উচিত। বিশেষ করে যারা পড়ালেখা করেন, এখন স্কুল লাইফে আছেন তাদের জন্য এই নিয়ম জেনে রাখা অনেক দরকারি। পরীক্ষায় বেশিরভাগ সময় বন্ধুকে চিঠি লেখার জন্য বলা হয়।
বন্ধুকে চিঠি লেখার নিয়ম বংলায় জানা না থাকলে আপনি এই চিঠি লিখতে পারবেন না। কাজেই ১০ নম্বর হাতছাড়া হয়ে যাবে। বাবা-মা, বোন-ভাই ও বন্ধুবান্ধবকে যেসব চিঠি লিখতে হয় তাকে ব্যাক্তিগত পত্র বলে। এই ব্যক্তিগত পত্র তথা বন্ধুকে চিঠি লেখার অবকাঠামো ২ টি আছে।
- চিঠির ভেতরের অংশ
- চিঠির বাইরের অংশ
প্রথমে আমরা চিঠির ভেতরের অবকাঠামো ও লেখার নিয়ম জেনে নিবো। এরপর আমরা বাইরের অংশ কিভাবে লিখতে হয় সে বিষয়ে আলোচনা করবো। চিঠির ভেতরের অংশ বা লেখার নিয়ম হচ্ছে –
- চিঠি লেখা সব সময় খাতার বা পেজের বাম দিক দিয়ে শুরু করতে হবে। ডান দিক দিয়ে কোনো কিছুই লেখা যাবে না।
- সবার প্রথমে ঠিকানা লিখতে হবে। চিঠি যেখান থেকে লেখা হচ্ছে অর্থাৎ আপনার নিজের ঠিকানা সবার উপরে লিখতে হবে।
- এরপর যেদিন চিঠি লেখা হচ্ছে সেদিনের তারিখ লিখুন।
- যেহেতু বন্ধুকে চিঠি লিখছেন তাহলে সম্ভাষণ হিসেবে লিখতে পারেন, “প্রিয় বন্ধু (বন্ধুর নাম)”।
- এখন বন্ধুকে সালাম দিয়ে বা অভিবাদন জানিয়ে আপনার পত্র লেখা শুরু করুন। সম্ভব হলে বন্ধুর বাবা-মা কেও সালাম বা অভিবাদন জানান। বন্ধুর খোঁজখবর জিজ্ঞেস করুন।
- এখন পত্রের মূল উদ্দেশ্যর দিকে অগ্রসর হন। যে কারণে পত্র লিখছেন সেটির বিবরণ দিন।
- শেষে আবারো কৃতজ্ঞতা ও অভিবাদন জানিয়ে দিন। অথবা, লিখুন, “আজ এতই। আবারো নতুন কোনো চিঠিতে লিখবো। ভালো থেকো। তোমার বাবা-মাকে আমার অভিবাদন জানায়ো।”
- এবার পত্রের ইতি টানুন। লিখতে পারেন, “ইতি, তোমার বন্ধু (নিজের নাম)”।
Read More : ক্ষুদে গল্প লেখার নিয়ম কি? ৯ টি নিয়ম জেনে ১০ নম্বর তুলুন
চিঠির বাইরের কাঠামো বা অংশে দুইটি বিষয়বস্তু মনে রাখতে হবে। একটি হচ্ছে প্রেরক অংশ আরেকটি হচ্ছে প্রাপক অংশ। প্রেরক হচ্ছে যিনি চিঠি পাঠাচ্ছেন।
আর প্রাপক হবেন তিনি যাকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। অর্থাৎ প্রেরকের স্থলে আপনার নিজের নাম ঠিকানা থাকবে এবং প্রাপকের স্থলে আপনার বন্ধুর নাম ঠিকানা থাকবে।
প্রেরক: মোঃ ‘ক’ ইসলাম (আপনি) ঠিকানা : ‘খ’ অঞ্চল জেলা : ‘গ’ ডাকঘর: ‘ঘ’ | প্রাপক: মোঃ ‘চ’ ইসলাম (আপনি) ঠিকানা : ‘ছ’ অঞ্চল জেলা : ‘জ’ ডাকঘর: ‘ঝ’ |
বন্ধুকে চিঠি লেখার একটি ডেমো
নিজের ঠিকানা, জেলার নাম
তারিখ: ১৬-১০-২০২৩
প্রিয় বন্ধু (বন্ধুর নাম),
আশা করি ভালো আছো। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম জানায়ো। আজ অনেকদিন পর তোমাকে পত্র লিখছি। আশা করি তোমার শরীর-স্বাস্থ্য সকল কিছু ভালো আছে। আজকে আমি মূলত তোমাকে একটি বিষয় জানানোর জন্য পত্র লিখছি। বিষয়টি হচ্ছে, (পত্র লিখার মূল বিষয় লিখুন)।
এই ব্যাপারে তোমাকে বিস্তারিত লিখতেছি। (উক্ত বিষয়ের উপর বিস্তারিত বিবরণ লিখুন)।
আজ এতই। আবারো নতুন কোনো চিঠিতে লিখবো। ভালো থেকো। তোমার বাবা-মাকে আমার অভিবাদন জানায়ো।
ইতি,
তোমার বন্ধু (নিজের নাম)
প্রেরক: মোঃ (নিজের নাম) ঠিকানা : (নিজের ঠিকানা) জেলা : (নিজ জেলা) ডাকঘর: (নিজ ডাকঘর) | প্রাপক: মোঃ (বন্ধুর নাম) ঠিকানা : (বন্ধুর ঠিকানা) জেলা : (বন্ধুর জেলা) ডাকঘর: (বন্ধুর ডাকঘর) |
Read More : কাস্টমাইজেশন কি? অনলাইনের ভাষায় কাস্টমাইজেশন এর উদাহরণ
Conclusion
আমি আশা করছি আমার আজকের আলোচনা আপনার উপকারে আসবে। আমি আজকে আমার মূল আলোচ্য বিষয় বন্ধুকে চিঠি লেখার নিয়ম বাংলায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। একটি চিঠি অংশ থাকে এবং উভয় অংশ কিভাবে লিখতে হয় সেই নিয়মগুলো জানিয়ে দিয়েছি।
এর পাশাপাশি বন্ধুকে চিঠি লেখার একটি ডেমো দেখিয়ে দিয়েছি। আপনি চাইলে ডেমোটি কপি করে সেখানে নিজের তথ্য বসিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ চিঠি লিখতে পারেন। এতে আপনার কাজ অনেক সহজ হবে এবং তাড়াতাড়ি চিঠি লিখতে পারবেন।
শুধু খালি স্থানগুলোতে নিজের তথ্য বসিয়ে দিতে হবে। তাছাড়াও যারা নিয়ম পড়ে বুঝতে পারেননি। তারা ডেমো চিঠি দেখে চিঠি লেখার নিয়ম ভালো করে বুঝতে পারবেন। সর্বোপরি বলতে চাই, যারা ছাত্র জীবনে আছেন তারা এই নিয়মটি ভালোভাবে আয়ত্ত করে নেন।
কারণ, স্কুল জীবনের প্রায় প্রত্যেকটি পরীক্ষায় আপনাকে চিঠি লেখার প্রয়োজন পড়বে। একবার আপনি যদি ভালো করে চিঠি লেখার নিয়ম আয়ত্ত করতে পারেন। তাহলে আজীবন আপনি ভালোভাবে চিঠি লিখতে পারবেন এবং পূর্ণাঙ্গ নাম্বার তুলতে পারবেন।