ফরিদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত | ফরিদপুর জেলার বিখ্যাত ব্যাক্তি

বাংলাদেশের অন্যতম একটি জেলার নাম ফরিদপুর। ফরিদপুরের অবস্থান বাংলাদেশের মানচিত্রের ঠিক মধ্যভাগে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মাঝামাঝি অবস্থা নিয়ে ফরিদপুর জেলাটি অবস্থিত। আজকে আমরা এই ফরিদপুর জেলা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি।

বিশেষ করে ফরিদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এবং ফরিদপুর জেলার বিখ্যাত ব্যাক্তি এর নানা ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে আমরা কথা বলব। সকল ধরনের আলোচনা আজকের এই পোস্টে করা হবে। তাই পোস্টটি সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ে নিবেন।

ফরিদপুর জেলার ইতিহাস

বাংলাদেশের অন্যতম এই ফরিদপুর জেলাটি 1786 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আরেকটি মত অনুযায়ী এই জেলাটি ১৮১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফরিদপুরের সুফি সাধক শাহ শেখ ফরিদ উদ্দিন এর নাম অনুযায়ী এই জেলাটির নাম ফরিদপুর রাখা হয়।

এর পূর্বে এই জেলাটি কে ফাতেহাবাদ নামে চেনা হত। আবার ১৭৮৬ সালে ফরিদপুর জেলার প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল জালালপুর। তৎকালীন এই জেলাটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় ছিল। ১৮৬০ সালে এটি ঢাকা থেকে বিভক্ত হয়ে যায়।

বিভক্ত হয়ে এটি আলাদা একটি জেলার পরিচিতি লাভ করে যার নাম হয় ফরিদপুর। ফরিদপুর জেলাটি অনেক বৃহত্তর একটি জেলা ছিল। যার কারণে পরবর্তীতে এটিকে আলাদা পাঁচটি জেলায় বিভক্ত করে দেওয়া হয়। যেগুলো হচ্ছে –

  1. ফরিদপুর
  2. রাজবাড়ী
  3. গোপালগঞ্জ
  4. মাদারীপুর এবং
  5. শরীয়তপুর

অর্থাৎ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলাকে ভেঙে এই পাঁচটি জেলা রূপান্তর করা হয়।

ফরিদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

ফরিদপুর বিখ্যাত হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর ভৌগলিক অবস্থান, জনসংখ্যা ও রাজধানীর কাছাকাছি হওয়ায় জেলাটি অনেক বিখ্যাত। তাছাড়া পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও ফরিদপুর অনেক অংশে বিখ্যাত। এই জেলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান।

তাছাড়াও পদ্মার জন্য এই জেলার টি অনেক বিখ্যাত। বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক বিয়ের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গগণ এই জেলার জন্মগ্রহণ করেছেন। যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আরো পড়ুনগাজীপুর কিসের জন্য বিখ্যাত? গাজীপুরের পূর্ব নাম কি?

ফরিদপুর জেলার ১৭টি বিখ্যাত বা দর্শনীয় স্থান

ফরিদপুর জেলার মধ্যে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ফরিদপুর জেলার অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থানসমূহ আপনাদের সামনে উল্লেখ করা হলো –

  1. নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট
  2. দিঘীপাড় গইবি মসজিদ
  3. গেরদা
  4. টেপা খোলা সুইচগেট
  5. ধলার মোড়
  6. রাজেন্দ্র কলেজ
  7. পদ্মা বাঁধ
  8. পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বাসভবন
  9. আটারশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিল
  10. পদ্মা নদীর বালুচর
  11. শ্রীধাম অঙ্গন
  12. শেখ রাসেল শিশু পার্ক
  13. অম্বিকা ময়দান
  14. ফরিদপুর জেলা জজকোর্ট ভবন
  15. মুন্সিবাড়ি, আলফাডাঙ্গা
  16. জাকেরগঞ্জ নীলকুটি, আলফাডাঙ্গা এবং
  17. শেখ জামাল স্টেডিয়াম, ফরিদপুর

ফরিদপুরের ঐতিহাসিক স্থান

এ জেলার অন্যতম কয়েকটি প্রাচীন মসজিদ হচ্ছে –

  • গেরদা মসজিদ
  • পাথাইল মসজিদ ও দিঘি
  • সাতুর মসজিদ

এই এলাকার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্থাপনা গুলো হল –

  • ফাতেহাবাদ টাকশাল
  • মথুরাপুরের দেওল
  • জেলা জজকোর্ট ভবন এবং
  • ভাঙ্গা মফিজ কোর্ট ভবন
  • বসুদেব মন্দির ও
  • জগবন্ধু আঙিনা

১৮৬৯ সালে ফরিদপুর পৌরসভার সৃষ্টি হয়। ৯ টি ওয়ার্ড ও 35 টি মহল্লা নিয়ে জেলা শহর গঠিত হয়েছিল। যার আয়তন ২০.২৩ বর্গ কিলোমিটার।

পল্লীকবি জসীমউদ্দীন

বাংলা সাহিত্যে অনেক উল্লেখযোগ্য এবং বিখ্যাত একজন কবি। যিনি বাংলার মানুষের কাছে পল্লী কবি নামে পরিচিত। সেই পল্লী কবি জসিম উদ্দিন ফরিদপুর জেলার কীর্তি সন্তান।

পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের জন্মভূমি হচ্ছে ফরিদপুর। এছাড়াও ফরিদপুরের জমিনে বাংলার ইতিহাসের অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি বর্গগণ জন্ম নিয়েছেন। সামনে এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানতে পারব।

ফরিদপুর জেলার আয়তন

ফরিদপুর জেলার আয়তন হচ্ছে ২০৭২.৭২ বর্গ কিলোমিটার। এই জেলার উত্তরে অবস্থান করছে রাজবাড়ী জেলা। দক্ষিনে গোপালগঞ্জ জেলা। পশ্চিমে মাগুরা জেলা এবং নড়াইল জেলা। আর পূর্ব দিকে ঢাকা জেলা, মুন্সিগঞ্জ জেলা ও মাদারীপুর জেলা অবস্থিত।

ফরিদপুর জেলার জনসংখ্যা কত?

২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, তৎকালীন বাংলাদেশে অবস্থিত এ ফরিদপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ২০ লক্ষ ৮৮ হাজার জন। যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১.২৮২% ছিল।

আর ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই জেলার জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিল ১.৭৭ শতাংশ। তবে বর্তমান ২০২৩ সালে ফরিদপুর জেলার মোট জনসংখ্যা হচ্ছে 23 লক্ষ 60 হাজার 272 জন

আরো পড়ুনকুড়িগ্রাম জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত? কুড়িগ্রাম জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

ফরিদপুর জেলার বিখ্যাত ব্যাক্তি

আগেই বলেছি ফরিদপুর জেলায় অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গগণ ছিলেন এবং আছেন। ফরিদপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের তালিকা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।

ফরিদপুর জেলার সকল বিখ্যাত ব্যক্তিদের এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হবে তবে অনেকেই ছুটে যেতে পারেন।

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
  • বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম
  • সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী
  • হাজি শরীয়তুল্লাহ
  • শাহ শেখ ফরিদ উদ্দিন
  • ইমাম উদ্দিন আহমেদ
  • মিয়া লুৎফর রহমান
  • নবাব আব্দুল লতিফ
  • অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন
  • ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন
  • পল্লী কবি জসীমউদ্দীন
  • কে এম ওবায়দুর রহমান
  • ফকির আলমগীর
  • অম্বিকাচরণ মজুমদার
  • সুফি মোতাহার হোসেন চৌধুরী
  • কামাল ইবনে ইউসুফ
  • আলিমুজ্জামান চৌধুরী
  • কানাই লাল শীল
  • অধ্যাপক এম এ সামাদ
  • ইউসুফ আলী চৌধুরী
  • ডাক্তার মোঃ জাহেদ
  • আ ন ম আব্দুস সোবহান
  • বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ
  • কবি হুমায়ুন কবির
  • কাজী সিরাজুল ইসলাম
  • রাজিয়া মজিদ
  • চারুচন্দ্র চক্রবর্তী জরাসন্ধ
  • মুসা বিন শমসের
  • মাওলানা আব্দুল আলী
  • নরেন্দ্রনাথ মিত্র
  • এ কে আজাদ
  • ক্রীড়াবিদ আলাউদ্দিন খান
  • সৈয়দ আব্দুর রব
  • নাট্যকর নুরুল মোমেন
  • ক্যাপ্টেন্স সিকান্দার আলী
  • খান বাহাদুর আসাদুজ্জামান
  • মুন্সি মহিউদ্দিন
  • কবি নাজমুল হক নজির

ফরিদপুর জেলার উপজেলা সমূহ

ফরিদপুর জেলার মধ্যে মোট পৌরসভা হচ্ছে – ৪ টি। মোট ওয়ার্ড হচ্ছে – ৩৬ টি। মোট মহল্লা হচ্ছে – ৯২ টি। মোট ইউনিয়নহচ্ছে – ৭৯ টি। মোট গ্রাম হচ্ছে – ১৮৫৯ টি। আর মোট উপজেলা হচ্ছে – ৯ টি। উপজেলাগুলো হলো –

  1. ফরিদপুর সদর উপজেলা
  2. বোয়ালমারি উপজেলা
  3. আলফাডাঙ্গা উপজেলা
  4. মধুখালী উপজেলা
  5. ভাঙ্গা উপজেলা
  6. নগরকান্দা উপজেলা
  7. চরভদ্রাসন উপজেলা
  8. সদরপুর উপজেলা
  9. সালথা উপজেলা

ফরিদপুরের বিখ্যাত খাবার কি?

খেঁজুরের গুড় ফরিদপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী এবং ফরিদপুরের অনেক বিখ্যাত খাবার। তাছাড়া বর্তমানে এই অঞ্চলে রসগোল্লা অনেক পছন্দনীয় খাবার। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ফরিদপুরেও বাঙালি খাবারগুলো জনপ্রিয়। তাছাড়া নানারকম মিষ্টি ও দই ফরিদপুরে বিখ্যাত।

FAQ

  1. ফরিদপুর এর পুরাতন নাম কি?

    পূর্বে এই জেলাটি কে ফাতেহাবাদ নামে চেনা হত। আবার ১৭৮৬ সালে ফরিদপুর জেলার প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল জালালপুর।

  2. ফরিদপুর নামকরণ কিভাবে হয়?

    ফরিদপুরের সুফি সাধক শাহ শেখ ফরিদ উদ্দিন এর নাম অনুযায়ী এই জেলাটির নাম ফরিদপুর রাখা হয়।

  3. ফরিদপুরের গ্রাম কয়টি?

    ফরিদপুর জেলার মোট গ্রাম হচ্ছে – ১৮৫৯ টি

Leave a Comment