আশা করছি আপনি ভালো আছেন। বর্তমান সময় প্রায় প্রত্যেকটি ঘরে ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার সহজে পাওয়া যায়। অনেকে ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার ততো ভালো করে অপারেট করতে পারেন না। কিন্তু আপনি নতুন ল্যাপটপ বা কম্পিউটার কিনেছেন।
আজকে আমরা নতুন ল্যাপটপ ক্রেতাদের সাহায্যের কথা বিবেচনা করে আজকের এই পোস্টটি করছি। আমরা আলোচনা করব নতুন ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার নিয়ম কি এবং কিভাবে নতুন ল্যাপটপ ভালোভাবে চার্জ দিতে হবে? যাতে ল্যাপটপের ব্যাটারি তাড়াতাড়ি নষ্ট না হয়।
ল্যাপটপে চার্জ দেওয়ার নিয়ম তো অনেক সোজা কিন্তু ল্যাপটপের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার নিয়ম অনেক জটিল। । ল্যাপটপের ক্ষেত্রে যে সুষম নিয়মগুলো রয়েছে সেগুলো ভালো করে মেনে চললে, মেইনটেইন করলে ল্যাপটপের ব্যাটারির আয়ু দীর্ঘ করা যায়।
এর জন্য অনেকগুলো নিয়মাবলী রয়েছে যেগুলো আজকের পোস্টে জানানো হবে।
Read More : পুরাতন ল্যাপটপ কোথায় পাওয়া যায়? কেনার আগে করণীয় কি?
নতুন ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার নিয়ম
সর্বপ্রথম আমরা যে আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় সেটি জেনে নেব। নতুন ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার নিয়ম আপনি যে ব্রান্ডের ল্যাপটপ কিনুন না কেন সকল নতুন ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার নিয়ম প্রায় একই রকমের।
তাই আমি নতুন ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার একটি সরল ও গ্রহণযোগ্য নিয়ম বলে দেবো। যেটি সকল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের জন্য প্রযোজ্য হবে। নতুন ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি পাঁচটি বিষয় বস্তুকে চিহ্নিত করেছি।
এই বিষয়বস্তু বাদ নিয়মাবলী মেনে চলবে আপনার নতুন ল্যাপটপ সুন্দরভাবে চাষ করতে পারবেন। তাছাড়া আর ল্যাপটপ ও ল্যাপটপের ব্যাটারি দীর্ঘায়ু হবে। পাঁচটি নিয়ম গুলো হচ্ছে।
- অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার
- অফিসিয়াল মেনুবুকের নির্দেশনা
- কুলিং সিস্টেম
- বিরতি
- অতিরিক্ত চার্জ করা থেকে বিরত থাকা
অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার
আপনি যখন নতুন মোবাইল ফোন কিনেন। তখন আপনাকে মোবাইল ফোনের বক্সে একটি চার্জার দেওয়া হয়। যেদিকে আমরা সেই মোবাইল ফোনের অরিজিনাল চার্জার বলে থাকি। আর অরিজিনাল চার্জার কতটা ভালো হয় এটা বলার বাইরে।
আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করি আমরা অরিজিনাল চার্জার সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রাখি। যে অরিজিনাল চার্জার কতটা উত্তম। ঠিক একই ভাবে ল্যাপটপের ক্ষেত্রেও নতুন ল্যাপটপ কেনার সময় ল্যাপটপের সাথে অরজিনাল চার্জার বা এডাপ্টার দেওয়া হয়।
ল্যাপটপের চার্জারকে সাধারণত এডাপ্টার বলা হয়। এই এডাপটার হয়ে থাকে অরিজিনাল। এই অরিজিনাল এডাপ্টার দিয়ে আপনি নিজের নতুন ল্যাপটপে চার্জ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
এখন কথা হচ্ছে নতুন ল্যাপটপের ক্ষেত্রে কতটুকু চার্জ দেবো? নতুন ল্যাপটপের ক্ষেত্রে সবার প্রথমে যে চার্জটি দিবেন সেটি সর্বোচ্চ অর্থাৎ ব্যাটারির ১০০% চার্জ দিবেন।
ব্যাটারী ১০০% চার্জ হয়ে যাওয়ার পর সাথে ব্যাটারির এডাপ্টার ল্যাপটপ থেকে খুলে দিতে হবে। এরপর আপনি ল্যাপটপের চার্জ পুরোপুরি শূন্য না হওয়া পর্যন্ত ল্যাপটপটি ব্যবহার করবেন। এর আগে ল্যাপটপে চার্জ দিবেন না।
Read More : ল্যাপটপে কিভাবে অ্যাপস ডাউনলোড করব?
কারণ নতুন অবস্থায় সম্পূর্ণ ব্যাটারি শেষ করার পর এই ল্যাপটপে নতুনভাবে চার্জ দিবেন। শুরুর দিনগুলোতে একটু লক্ষ্য রাখুন আপনার ল্যাপটপে কত ঘন্টা চার্জ ব্যাকআপ রয়েছে। কারণ একটা ল্যাপটপের ব্যাটারি সর্বক্ষণ ভালো থাকে না আস্তে আস্তে ঠিক হতে শুরু করে।
অফিসিয়াল মেনুবুকের নির্দেশনা
আপনি যদি ল্যাপটপের চার্জ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে রয়েছেন। তাহলে সর্বোত্তম হচ্ছে ল্যাপটপের অফিসিয়াল মেনুব বের করা। অফিসিয়াল মেনুবুক এর মধ্যে সবকিছু নির্দেশনা দেওয়া আছে।
নতুন অবস্থায় আপনার ল্যাপটপে কত ঘন্টা চার্জ প্রয়োজন এবং কত পার্সেন্ট চার্জ দিবেন সেসব বিষয়ে মেনু বুকে নির্দেশনা দেওয়া থাকে। তাই মনের মধ্যে কোন সন্দেহ না রাখে আপনি নিজের ল্যাপটপের মেনু বুক বের করুন।
সেখানে সকল তথ্য বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন। তারপর নিজের ল্যাপটপে চার্জ দিন। এটা আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি তাড়াতাড়ি ক্ষয় হওয়া থেকে বিরত থাকবে।
ল্যাপটপের ব্যাটারি ক্ষয় হবেই। কিন্তু যদি নিয়মাবলী মেনে চলে সে ল্যাপটপকে ব্যবহার করা হয় এবং চার্জ দেওয়া হয় তাহলে ল্যাপটপের ব্যাটারির আয়ু বেড়ে যায়।
কুলিং সিস্টেম
নতুন অবস্থায় কোন ল্যাপটপের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয় না। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে ততই এই সমস্যা বাড়তে থাকে। আপনি যদি নিজের হাতে থাকা মোবাইল ফোনের দিকে লক্ষ্য করেন। তাহলে অনেক সময় চার্জ দেওয়ার সময় আপনার মোবাইল ফোনটি গরম হয়ে যায়।
আবার অনেক সময় মোবাইলটি ব্যবহার করার সময়ও মোবাইল অনেক গরম হয়ে যায়। এর পিছনে প্রধান কারণ হচ্ছে মোবাইলের কুলিং সিস্টেম ঠিক না থাকা। তেমনি ভাবে ল্যাপটপের ক্ষেত্রে নতুন ল্যাপটপগুলোতে এই গরম হওয়ার ঘটনা অনেক কম দেখা যায়।
কিন্তু যতই ল্যাপটপ পুরাতন হতে থাকে ল্যাপটপ গরম হতে থাকে। তবে মোবাইলের চেয়ে বেশি ঠান্ডা রাখা প্রয়োজন ল্যাপটপকে। ল্যাপটপকে ঠান্ডা রাখার জন্য এর ভিতরে অনেকগুলো কুলিং ফ্যান লাগানো। কুলিং ফ্যানগুলো আস্তে আস্তে অক্ষম হয়ে যাওয়ার কারণে ল্যাপটপ গরম হতে থাকে।
আরে গরম হওয়ার কারণে ল্যাপটপের ব্যাটারি আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়। ল্যাপটপ চালানোর সময় ল্যাপটপ গরম হলে ব্যাটারি ক্ষয় হয়। আবার ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার সময় ল্যাপটপ গরম হলে অতি দ্রুত ব্যাটারি ক্ষয় হতে থাকে।
তাই সবার আগে পর্যালোচনা করে দেখুন যে আপনার ল্যাপটপে থাকার কুলিং সিস্টেমে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। যদি সমস্যা পেয়ে থাকেন এবং এটি সমাধান করা সম্ভব না হয়। তাহলে আপনি বাড়তিভাবে কুলিং ফ্যান কিনতে পারেন।
একটি কুলিং ফ্যানের দাম সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই এই অল্প টাকা একটি কুলিং ফ্যান কিনে আপনি নিজের ল্যাপটপের নিচে রাখতে পারেন।
যার কারণে আপনার ল্যাপটপে ব্যাটারির অংশটি সবসময় ঠান্ডা থাকবে। এটি আপনার ল্যাপটপকে এবং ল্যাপটপের ব্যাটারিকে দীর্ঘ আয়ু দান করবে।
Read More : ল্যাপটপে বাংলা লেখার নিয়ম । ৩টি চমৎকার নিয়ম ও সফটওয়্যার
বিরতি
ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় বিরতি নেওয়া ল্যাপটপকে দীর্ঘায়ু প্রদান করার জন্য অনেক কার্যকর হতে পারে। আপনি ল্যাপটপ যত ব্যবহার করবেন এটি তত যা নষ্ট হবে। চার্জ কম হয়ে যাওয়ার পর আপনি আবার সেটিকে চার্জে লাগিয়ে দেবেন।
যার ফলে ল্যাপটপে দিনে কয়েকবার চার্জ দিতে হচ্ছে। দিনে এতবার ল্যাপটপের চার্জ কমে যাওয়া আবার ল্যাপটপে সম্পূর্ণ চার্জ দেওয়া এটি ল্যাপটপের ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর। ভাবে দেখুন তো বারবার চার্জ ইন আর আউট হচ্ছে এর ব্যাটারির কতই না ক্ষতি হবে।
তাই ল্যাপটপ একাধারে বেশিক্ষণ ব্যবহার করা ঠিক না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন দিনে একটা ল্যাপটপে দুই থেকে তিনবার চার্জ দিলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু চার্জ দেওয়ার পরিমাণ যদি এর চেয়ে অধিক হয়ে যায়। তাহলে ল্যাপটপের ব্যাটারি তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে।
তাই আপনার যদি করণীয় সেটি হচ্ছে ল্যাপটপকে অযথা বারবার চার্জ দিবেন না এবং অযথা ব্যবহার করা হতে বিরত থাকবেন। কাজের সময় কাজ করবেন এরপর ল্যাপটপটি বন্ধ করে রেখে দিবেন।
যাকে আমরা বিরতি বলি। এভাবে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে চার্জ কম খরচ হবে। চার্জ কম খরচ হলে চার্জ কম দিতে হবে যার কারণে ব্যাটারি দীর্ঘায়ু হবে।
অতিরিক্ত চার্জ করা থেকে বিরত থাকা
নতুন ল্যাপটপের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ দেওয়ার ল্যাপটপের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত চার্জ বলতে বোঝায় ল্যাপটপে সর্বোচ্চ চার্জ অর্থাৎ ১০০% চার্জ হয়ে যাওয়ার পরও ল্যাপটপকে আবার চার্জ দেওয়া।
এর মানে হচ্ছে ল্যাপটপ সম্পূর্ণ চার্জ হয়ে যাওয়ার পরও ল্যাপটপের চার্জার না খোলা। এটি ল্যাপটপের ব্যাটারি তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী। তাই ল্যাপটপ সর্বোচ্চ ১০০% চার্জ হয়ে যাওয়ার পর ল্যাপটপ থেকে চার্জ দেওয়ার অ্যাডাপ্টার খুলে ফেলতে হবে।
কিন্তু নতুন ল্যাপটপের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ১০০% চার্জ দেওয়া যাবে। ল্যাপটপ একটু পুরাতন হলে সর্বোচ্চ 80 থেকে 90% চার্জ দেওয়ার পর ল্যাপটপের চার্জার খুলে দেবেন। এরপর ল্যাপটপটি ব্যবহার করবেন এবং 10 থেকে 20 পার্সেন্ট চার্জ যখন চলে আসবে তখন আবার ল্যাপটপটি চার্জে লাগিয়ে দেবেন।
এভাবেই ল্যাপটপ ব্যবহার করলে ল্যাপটপ ক্ষতি হওয়া থেকে বেঁচে যাবে এবং ল্যাপটপের ব্যাটারির আয়ু বেড়ে যাবে।
Read More : কম্পিউটার বা ল্যাপটপ স্লো হলে করণীয় এবং ফাস্ট করার উপায়
FAQ
নতুন ল্যাপটপ কিভাবে চার্জ করবো?
নতুন ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ব্যাটারী ১০০% চার্জ হয়ে যাওয়ার পর সাথে ব্যাটারির এডাপ্টার ল্যাপটপ থেকে খুলে দিতে হবে। এরপর আপনি ল্যাপটপের চার্জ পুরোপুরি শূন্য না হওয়া পর্যন্ত ল্যাপটপটি ব্যবহার করবেন। কিন্তু কয়েকদিন পর চার্জ ১০%-২০% হলেই চার্জ লাগিয়ে দিবেন।
ল্যাপটপ ব্যবহার করে চার্জ দেওয়া যাবে কি?
ল্যাপটপ ব্যবহার করে চার্জ দেওয়া যাবে। কিন্তু এভাবে বারবার করলে আপনার ল্যাপটপ প্রচন্ড গরম হতে শুরু হবে। এতে ল্যাপটপ ও ল্যাপটপের ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই বেশি প্রয়োজন ছাড়া এভাবে করবেন না।
১০০ এর পর ল্যাপটপে চার্জ দিলে কি হয়?
এটি ল্যাপটপের ব্যাটারি তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী। তাই ল্যাপটপ সর্বোচ্চ ১০০% চার্জ হয়ে যাওয়ার পর ল্যাপটপ থেকে চার্জ দেওয়ার অ্যাডাপ্টার খুলে ফেলতে হবে।
ল্যাপটপ বন্ধ করার পর কি চার্জ দেওয়া যায়?
জি হাঁ, ল্যাপটপ বন্ধ করার পর চার্জ দেওয়া যায়। এভাবে ল্যাপটপ চার্জ করলে ল্যাপটপ ভালো থাকে। তাছাড়া ল্যাপটপ গরম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকেনা। এটি উত্তম পদ্ধতি।
Conclusion
এই পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে নতুন ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি। তাছাড়া ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে পাঁচটি বিষয়ে মাথায় রাখতে হয় সেগুলো জানিয়ে দিয়েছি।
এছাড়া আমি বলতে চাই ল্যাপটপ যখন ব্যবহার করবেন তখন ল্যাপটপের চার্জ সম্পূর্ণ জিরো করবেন না। সর্বনিম্ন 10% বা 20% চার্জ যখন চলে আসবে তখন ল্যাপটপে চার্জ লাগিয়ে দিন। কারণ চার্জ বারবার শূন্য করলে (০%) ল্যাপটপের ব্যাটারি ডেড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ল্যাপটপের ব্যাটারির চার্জ বারবার শূন্য করবেন না। শূন্য হওয়ার আগেই চার্জে লাগিয়ে দিবেন। একবার ব্যাটারির ডেড হলে এটিকে অনেক কষ্ট করে ঠিক করতে হয়। ল্যাপটপের ব্যাটারি ডেড হলে মেকারের কাছে নিয়ে যাবেন সে আপনার ব্যাটারির চার্জ উঠিয়ে দিবে।